সিরাজগঞ্জ সদর প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর মধ্যে রোল মডেল। কারণ আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি। বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তিনি আমাদের সবার মাঝেই আছেন।
২০ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় পলাশডাঙ্গা যুব শিবির স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর প্রাঙ্গণে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সাবসেক্টর পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের মুক্তিযোদ্ধা জনতা মিলন মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্য আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন এসব মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে, গর্জে উঠতে হবে। আমাদের সন্তানদের কি দায়িত্ব নাই? অন্যরা কোটা নিয়ে কথা বললে, আমাদেরও কথা বলতে হবে? শুধু কাগজে–কলমে কোটা লিখলে হবে না। সম্মানজনক হারে কোটা পুনর্বিন্যাস করে শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের অধিকার রক্ষা করা উচিত। আপনারা বীরের সন্তান, বাঘের বাচ্চা। বাঘের বাচ্চা হয়ে যদি বিড়াল হয়ে যান। তাহলে কি হবে? আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পেরেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু কোটা আন্দোলনের বিষয়ে আমাদের সন্তানেরা কোথাও একটা শব্দ করেছে?
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনারা সাথে থাকলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সকল দাবি পূরণ করা হবে। চিকিৎসার ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঢাকায় উন্নত ২২টি হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য স্পেশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জুলাই মাস থেকে সারাদেশে সকল মৃত মুক্তিযোদ্ধার জন্য একই ডিজাইনের কবর দেওয়া হবে যা দেখে সহজেই যে কেউ বুঝতে পারে মুক্তিযোদ্ধার কবর।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেন, পাকিস্তান একটি অকার্যকর দেশ। তাই তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র করার জন্যই দেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে এখনো ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। তারা এই দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। এদেশে থাকলেও তাদের টান এখনও পাকিস্তানের প্রতি। বিএনপি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ডেকে এনে পুরস্কৃত করেছে। তারা এখনও চান বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করতে। কিন্তু দেশের সাধারণ জনগণ তা হতে দেবে না।
পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের সহ-সর্বাধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্বা এ্যাড. বিমল কুমার দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি।
এসময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম এমপি, সিরাজগঞ্জ সদর আসনের এমপি ড.জান্নাত আর হেনরী, জেলা প্রশাসক মীর মোঃ মাহবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. কে.এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছামাদ তালুকদার, উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিনা মির্জা মুক্তি, শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিমুল হক মীরু, কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ, নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম, কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা শাহিন সুলতানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, ‘পলাশডাঙ্গা’ এলাকায় ১৯৭১ সালে গড়ে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। যার সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মীর্জা। যে কারণে যুদ্ধকালীন এই বাহিনী লতিফ মীর্জার বাহিনী নামেও পরিচিত ছিল। এই বাহিনী ছাত্র, শ্রমিক, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য, ইপিআরের সদস্য, বিএলএফের সদস্য ও এফএফের সদস্যদের সমন্বয়ে পরিচালিত হত। এই পলাশডাঙ্গার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এই অঞ্চলে (মধ্য অদ্রঘাট) ১৯৭১ সালের ১৭ জুন পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পাক বাহিনী এই এলাকায় বহু নিরীহ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। পলাশডাঙ্গার বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া ও রাজশাহীর কিয়োদাংশে পাক বাহিনী রাজাকার আলবদর আলসামস বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫১টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় এবং তিনটি থানা দখল করে নেয়।